রমজানের ফজিলত গুরুত্ব ও হাদিস

রমজানের ফজিলত গুরুত্ব ও হাদিস

ইসলামের ৫ টি স্তম্ভের মধ্যে একটি হলো রোজা। প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য রমজান মাসে রোজা রাখা ফরজ। তিরমিজি শরীফে ৭২৩ নাম্বার হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা:) বলেন, কোনো ব্যক্তি যদি ওজর বা অসুস্থতা ছাড়া রমজানের মাত্র একটি রোজা পালন না করে, তাহলে সেই ব্যক্তি ওই রোজার পরিবর্তে সারা জীবন রোজা রাখে তহলেও সেই একটি রোজার ক্ষতিপূরণ হবে না। এই আর্টিকেলে মাহে রমজানের ফজিলত, গুরুত্ব ও হাদিস আলোচনা করা হয়েছে।


রমজানের ফজিলত


মাহে রমজানের ফজিলত ও গুরুত্ব অনেক রয়েছে। রমজানের ফজিলত সম্পর্কে ১০ টি হাদিস ও আয়াত নিম্নে দেওয়া হলো-

১. সুরা বাকারা আয়াত নাম্বার ১৮৫ : সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি রমজান মাস পাবে, সেই ব্যক্তি যেন অবশ্যই রোজা রাখে। আর তোমাদের মধ্যে কেউ যদি অসুস্থ হয় বা সফরে থাকে, তাহলে অন্য সময় কাজা হওয়া সমান সংখ্যা রোজা পূরণ করবে।

২. মুসনাদে আহমদ হাদিস নাম্বার ৮৩৬৮ : রাসুল (সা:) বলেন, আল্লাহর কসম! করে বলতেছি, মুসলমানদের জন্য রমজানের থেকে উত্তম আর কোনো মাস আসেনি। তিনি আরো বলেন, মুনাফিকদের জন্য রমজান মাসের থেকে অধিক ক্ষতির মাস আর আসেনি। মুমিনরা রমজান মাসে সারা বছরের জন্য ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় সংগ্রহ করে। আর মুনাফিকরা তাতে মানুষের উদাসীনতা ও দোষত্রুটি অন্বেষণ করে। রমজান মাস মুমিনের জন্য গনিমত আর মুনাফিকের জন্য ক্ষতির কারণ।

৩. সুরা বাকারা আয়াত নাম্বার ১৮৩ : আল্লাহ তা'আলা বলেন, হে ঈমানদাররা! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বনকারী হতে পারো।

৪. তিরমিজি শরীফ হাদিস নাম্নার ৬৮২ : রাসুল (সা:) বলেছেন, যখন রমজান মাসের প্রথম রাতের আগমন ঘটে, তখন দুষ্ট জিন ও শয়তানদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, তার একটি দরজাও খোলা হয় না এবং জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, তার একটি দরজাও বন্ধ করা হয় না। আর একজন ঘোষক ঘোষণা করতে থাকে হে কল্যাণের প্রত্যাশী! অগ্রসর হও। হে অকল্যাণের প্রার্থী! থেমে যাও। আল্লাহ তাআলা এ মাসের প্রতি রাতে অসংখ্য জাহান্নামিকে মুক্তি দান করেন।

৫. মুসনাদে আহমদ শরীফ হাদিস নাম্বার ৭১৪৮ : আবু হুরায়রা (রা:) বলেন, যখন রমজান মাসের আগমন ঘটল, তখন রাসুল (সা:) ইরশাদ করলেন, তোমাদের কাছে বরকতময় মাস রমজান এসেছে। আল্লাহ তা'আলা তোমাদের ওপর এ মাসের রোজা ফরজ করেছেন।

৬. বুখারি শরীফ হাদিস নাম্বার ৭৪৯২ : রমজানের রোজা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আবার রোজার বিনিময়ে অনেক বড় পুরস্কারেরও ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে। রাসুল (সা:) বলেন, আল্লাহ্ তা'আলা বলেন, রোজা আমারই জন্য। আমি নিজে এর প্রতিদান দেব। আমার বান্দা আমার জন্য পানাহার ছেড়ে দেয়, কামনা-বাসনা ছেড়ে দেয়। রোজাদারের জন্য দু’টি খুশি। একটি খুশি ইফতারের সময়। আরেকটি খুশি আমার সঙ্গে তার সাক্ষাতের সময়। রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিশকের সুগন্ধের চেয়েও উত্তম।

৭. বুখারি শরীফ হাদিস নাম্বার ১৮৯৪ : রমজান মাসে মানুষের প্রত্যেকটি আমল বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। একটি নেকি ১০ গুণ থেকে ক্ষেত্র বিশেষে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, কিন্তু রোজার ব্যাপারটি ভিন্ন। কারণ, রোজা আমার জন্য। সুতরাং তার প্রতিদান আমি নিজেই প্রদান করব।

৮. বুখারি শরীফ হাদিস নাম্বার ১৮৯৬ : জান্নাতে একটি ফটক আছে। তার নাম রাইয়্যান। কেয়ামতের দিন রোজাদারগণ সেই ফটক দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। অন্য কেউ সেই ফটক দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। ঘোষণা দেওয়া হবে- রোজাদারগণ কোথায়? তখন তারা উঠবে। তারা ছাড়া অন্য কেউ যাবে না। যখন তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে তখন রাইয়্যান ফটক বন্ধ করে দেওয়া হবে। সুতরাং আর কেউ এ ফটক দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।

৯. মুসনাদে আহমদ শরীফ হাদিস নাম্বার ৭৪৫০ : রাসুল (সা:) বলেন, অবশ্যই আল্লাহ তাআলা রমজান মাসের প্রত্যেক দিন ও রাতে অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। এবং প্রত্যেক মুমিন বান্দার একটি করে দোয়া কবুল করেন।

১০. মুসলিম শরীফ হাদিস নাম্বার ২৩০৮ : রাসুল (সা:) এমনিতেই প্রচুর দান করতেন। আর এ মাসে দানের পরিমাণ আরও বহুগুণে বাড়িয়ে দিতেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) বলেন, রাসুল (সা:) ছিলেন মানুষের মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা। তার দানশীলতা অধিকতর বৃদ্ধি পেত রমজান মাসে; যখন জিবরাঈল (আ:) তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। জিবরাঈল (আ:) রমজানের প্রতি রাতে আগমন করতেন এবং তারা পরস্পর কোরআন শোনাতেন। আল্লাহর রাসুল (সা:) তখন কল্যাণবাহী বায়ুর চেয়েও অধিক দানশীল।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url