ফরজ গোসলের নিয়ম, দোয়া, নিয়ত, গুরুত্ব, কারণ এবং বিকল্প পদ্ধতি

ফরজ গোসলের নিয়ম

গোসল আরবি শব্দ। এর অর্থ সম্পূর্ণ শরীর ধোয়া। আমাদের দেশে গোসল করা, স্নান করা, নাইতে যাওয়াও বলে থাকে। ফরজ গোসলের নিয়ম হলো সম্পূর্ণ শরীর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধোয়া এবং পবিত্রতা অর্জন করা। আল্লাহ তা'আলার নৈকট্য লাভের জন্য নাপাক থাকলে গোসলের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করতে হয়।


ফরজ গোসল করার জন্য একটি দোয়া রয়েছে। ফরজ গোসলের দোয়া হলো "নাওয়াইতুয়ান গোছলা লিরাফিল জানাবা-তি।" এই দোয়া পাঠ করে গোসল করতে হয়। এই দোয়ার অর্থ "আমি নাপাকি থেকে পাক হওয়ার জন্য গোসল করছি।"

এই আর্টিকেলে আপনি ফরজ গোসলের নিয়ম ও দোয়া এবং ফরজ গোসল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এই আর্টিকেল পাঠ করলে আপনি ফরজ গোসলের নিয়ম ও নিয়ত এবং ফরজ গোসল সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা পেয়ে যাবেন।

ফরজ গোসলের কারণ


মোট ৪ টি কারণে ফরজ গোসল করতেই হবে। ফরজ গোসলের কারণ ৪ টি হলো -

১. নারী ও পুরুষের যৌন মিলন - যে কোনো কারণে স্বপ্নদোষ বা যে কোনো উপায়ে বীর্যপাত হলে ফরজ গোসল করা তার জন্য বাধ্যতামূলক হয়ে যাবে। যত তারাতারি সম্ভব ফরজ গোসল করতে হবে।

২. মাসিক বন্ধ হওয়ার পর - মেয়েদের প্রতি মাসে মাসিক হয়ে থাকে। নারীদের মাসিক বন্ধ হওয়ার পর পবিত্রতা অর্জন করার জন্য গোসল করা ফরজ। যত তারাতারি সম্ভব ফরজ গোসল করতে হবে।

৩. সন্তান প্রসবের পর - মেয়েদের সন্তান প্রসবের পর নেফাসের রক্ত বন্ধ হলে পবিত্রতা অর্জন করার জন্য নারীদের গোসল করা ফরজ। যত তারাতারি সম্ভব ফরজ গোসল করতে হবে।

৪. মৃত ব্যক্তি - জীবত ব্যক্তিদের জন্য মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়া ফরজ।

ফরজ গোসলের নিয়ত


ফরজ গোসলের নিয়ত আরবিতে : নাওয়াইতুল গুছলা লিরাফইল জানাবাতি।

ফরজ গোসলের নিয়ত বাংলায় : আমি নাপাকি থেকে পাক হওয়ার জন্য গোসল করছি।

ফরজ গোসলের দোয়া


ফরজ গোসলের দোয়া আরবিতে : নাওয়াইতুয়ান গোছলা লিরাফিল জানাবা-তি।

ফরজ গোসলের নিয়ম


মোট ৩ টি নিয়ম সঠিক ভাবে পূরণ করলে ফরজ গোসল হয়ে যাবে। ১. কুলি করা; ২. নাকে পানি দেওয়া; ৩. সম্পূর্ণ শরীর পানি দিয়ে পরিষ্কার করা। লক্ষ রাখতে হবে সম্পূর্ণ শরীরের চুল পরিমান জায়গা পানি না পৌছালে ফরজ গোসল হবে না।

উত্তম ভাবে ফরজ গোসল সম্পূর্ণ করতে হলে ৭ টি নিয়ম সঠিক ভাবে পূর্ন করতে হবে।

১. বিসমিল্লাহ বা ফরজ গোসলের দোয়া পাঠ করে শুরু করা। লক্ষ রাখতে হবে যে, গোসলখানা ও ট্য়লেট একসাথে থাকলে বিসমিল্লাহ পাঠ করা যাবে না।

২. প্রথমে সম্পূর্ণ হাত ভালো করে পরিষ্কার করতে হবে।

৩. সম্ভব হলে গোসলের আগে বাথরুমের কাজ শেষ করে নেওয়া তারপর গোসল শুরু করা। এবার বাম হাত দিয়ে লজ্জা-স্থান পরিষ্কার করা।

৪. এবার নাপাকি পরিষ্কার করতে হবে। যদি শরীরে বা কাপরে নাপাকি থাকে, তাহলে ভালো করে পরিষ্কার করতে হবে।

৫. এবার ওজু করে নিতে হবে।

৬. এবার ফরজ গোসলের ৩ টি কাজ করতে হবে - কুলি করা; নাকে পানি দেওয়া; সম্পূর্ণ শরীর পানি দিয়ে পরিষ্কার করা। লক্ষ রাখতে হবে সম্পূর্ণ শরীরের চুল পরিমান জায়গা পানি না পৌছালে ফরজ গোসল হবে না।

৭. এবার পা পরিষ্কার করলে উত্তম ভাবে ফরজ গোসল শেষ হয়ে যাবে।

ফরজ গোসলের কাপড় ধোয়ার নিয়ম


আপনি প্রথমে ফরজ গোসল করবেন, তারপর অপবিত্র কাপড় ধুতে চাইলে ধুতে পারবে। ফরজ গোসলের কাপড় ধোয়ার নিয়ম আছে, আপনি আগে বা পরে ধুতে পারবেন, এতে কোনো সমস্যা নেই।

অপবিত্র কাপড় পবিত্র করার নিয়ম হলো - প্রথমে কাপড়ে লাগা অপবিত্র বস্তু লেগে থাকলে তা দূর করতে হবে। এরপর কাপড়কে তিনবার ধুতে হবে। প্রতিবার কাপর ধোয়ার সময় ভালো করে চিপে নিতে হবে। শেষবার একটু শক্তভাবে কাপর চিপে নিতে হবে, যাতে করে পরবর্তীতে আর কোনো পানি বের না হয়

ফরজ গোসলের পর কি ওযু করতে হবে


গোসলের শুরুতে অজু করা হলো সুন্নত। যেহেতু, ফরজ গোসলের মাধ্যমে অজু হয়ে যায় , তাই গোসলের পর ওজু ভঙ্গের কোনো কারণ না থাকলে, গোসলের পর ওযু করতে হবে না।

ফরজ গোসল করার পর অজু করার কোনো বিধান ইসলামে নেই। কারণ ফরজ গোসলে কুলি করা ও নাকে পানি দেওয়া ফরজ, পরিপূর্ণ অজু করে নেওয়া সুন্নত, যা গোসলেরই অংশ। আর ফরজ গোসল না হলে কুলি করা ও নাকে পানি দেওয়া সুন্নত এবং পরিপূর্ণ অজু করা মুস্তাহাব। তাই সঠিক ভাবে গোসল করার পর নতুন করে আবার অজু করা প্রয়োজন নেই।

ফরজ গোসলের ফরজ কয়টি


৩ টি ফরজ কাজ করলে ফরজ গোসল সম্পূর্ণ হবে। এই ৩ টি ফরজ কাজের মধ্যে একটি বাদ গেলে ফরজ গোসল হবে না। ফরজ গোসলের ফরজ কাজ ৩ টি হলো-

১. কুলি করা - মুখের ভিতর পানি নিয়ে ভালো ভাবে কুলি করে মুখ পরিষ্কার করতে হবে।

২. নাকে পানি দেওয়া - নাকের ভিতরে পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করতে হবে। লক্ষ রাখতে হবে নাকের ভিতরে নরম স্থান পর্যন্ত পানি পৌছাতে হবে।

৩. সম্পূর্ণ শরীর পরিষ্কার করা - পনি দিয়ে সম্পূর্ণ শরীর পরিষ্কার করতে হবে। লক্ষ রাখতে হবে সম্পূর্ণ শরীরের চুল পরিমান জায়গা পানি না পৌছালে ফরজ গোসল হবে না।

ফরজ গোসলের নিয়ম কয়টি


ফরজ গোসলের নিয়ম ৩ টি। এই ৩ টি নিয়ম পালন না করলে ফরজ গোসল হবে না। নিয়ম ৩ টি হলো ১. কুলি করা; ২. নাকে পানি দেওয়া; ৩. সম্পূর্ণ শরীর পানি দিয়ে পরিষ্কার করা। লক্ষ রাখতে হবে সম্পূর্ণ শরীরের চুল পরিমান জায়গা পানি না পৌছালে ফরজ গোসল হবে না।

ফরজ গোসলের গুরুত্ব


ইসলামে বলা হয়ে থাকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা ইমানের অঙ্গ। তাই আমাদের সকল সময় পবিত্র থাকতে হবে। পবিত্র থাকার জন্য আমাদের ফরজ গোসল করতে হবে। ফরজ গোসলের গুরুত্ব এর শেষ নেই। পবিত্রতা ছারা আমরা নামাজ আদায় করতে পারবো না। নামাজ হলো ফরজ কাজ। তাই নামাজ কাজা রাখা যাবে না। তাই আমরা অপবিত্র হলে যত দূরত্ব সম্ভব ফরজ গোসল করে নিবো।

ফরজ গোসলের নিয়ম হাদিস ও আয়াত


অনেক গুলো হাদিস ও আয়াত এসেছে ফরজ গোসল এর নিয়ম সম্পর্কে। আমরা সুরা বাকারা আয়াত নং ২২২ এবং আল হাদিসে ফরজ গোসলের নিয়ম নিয়ে এই আর্টিকেলে তুলে ধরেছি।

সুরা বাকারা আয়াত নং ২২২ : আল্লাহ পবিত্র এবং তিনি পবিত্রতা পছন্দ করেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, "যারা পবিত্র থাকে, তাদের আল্লাহ তা'আলা ভালোবাসেন।"

আল হাদিসে : গোসলের ফরজ হলো ৩ টি। যেমন - ১. ভালোভাবে কুলি করা; ২. নাকের ভেতর পানি দেওয়া; ৩. পুরো শরীর ধৌত করা। যে ব্যক্তি পবিত্রতার উদ্দেশ্যে গোসল করে, সেই ব্যক্তির পাপগুলো ঝরে যায় এবং ঝরে পড়া প্রতিটি পানির ফোঁটা ও কণা একেকটি নেকি তার আমল নামাই লেখা হয়।

ফরজ গোসলের বিকল্প


আপনার জন্য গোসল করা ফরজ হয়ে গেছে, তবে গোসলের জন্য পানি আসে পাশে নেই, অথবা রোগের কারণে গোসল করতে পারছেন না, তাহলে গোসলের বিকল্প আছে। এই অবস্থায় ফরজ গোসলের বিকল্প পদ্ধতি হলো "তায়াম্মুম"

ফরজ গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম


আপনার জন্য গোসল ফরজ হয়ে গেছে এবং আপনি পানি পাচ্ছেন না বা রোগের কারণে পানি ব্যবহার করতে পারছেন না, তাহলে ফরজ গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করে নিতে হবে। সুরা মায়েদা ৬ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তা'আালা বলেন,

وَإِن كُنتُم مَّرْضَى أَوْ عَلَى سَفَرٍ أَوْ جَاءَ أَحَدٌ مِّنكُم مِّنَ الْغَائِطِ أَوْ لَامَسْتُمُ النِّسَاءَ فَلَمْ تَجِدُوا مَاءً فَتَيَمَّمُوا صَعِيدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوا بِوُجُوهِكُمْ وَأَيْدِيكُم مِّنْهُ مَا يُرِيدُ اللَّـهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُم مِّنْ حَرَجٍ وَلَـكِن يُرِيدُ لِيُطَهِّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ

যদি তোমরা রুগ্ন হও, অথবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ প্রসাব-পায়খানা সেরে আসে অথবা তোমরা স্ত্রীদের সঙ্গে সহবাস করো, এই অবস্থায় পানি না পাও, তাহলে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও।

পুরুষের ফরজ গোসলের নিয়ম


মহিলা ও পুরুষের উপর ৪ টি কারণে গোসল ফরজ হয়। তবে পুরুষের এই ৪ টি কারণের মধ্যে ১ টা কারণে গোসল ফরজ হয়। পুরুষের গোসল ফরজ হওয়ার কারণ হলো যৌন মিলন বা নাপাক বস্তু। উপরে দেওয়া ফরজ গোসলের নিয়ম মহিলা ও পুরুষের জন্য একই, এর কোনো আলাদা বিধন নেই।

ফরজ গোসলের পর বীর্য বের হলে করণীয়


ফরজ গোসল শেষ হওয়ার পর যদি বীর্য বের হয়, তাহলে আর গোসল করার প্রয়োজন নেই। কারণ এ সময় সাধারণত উত্তেজনা ছারাই বীর্য বের হয়। এই সময় করণীয় হলো ওজু করে নেওয়া।

মেয়েদের ফরজ গোসলের কারণ


ফরজ গোসলের ৪ কি কারণের মধ্যে সব গুলো মেয়েদের জন্য ফরজ। এই ৪ টি কারণ হলো যৌন মিলন, মাসিক বন্ধ হওয়ার পর, সন্তান প্রসবের পর এবং মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানো।

নারীর ফরজ গোসলের নিয়ম


মেয়েদের ফরজ গোসলের নিয়ম আর পুরুষদের ফরজ গোসলের নিয়ম একই। মহিলাদের ফরজ গোসলের নিয়ম এর আলাদা কোনো বিধান ইসলামে দেওয়া হয়নি। ফরজ গোসলের নিয়ম উপরে দেওয়া আছে।

পিরিয়ডের পর ফরজ গোসলের নিয়ম


মেয়েদের পিরিয়ডের বা মাসিকের পর ফরজ গোসলের নিয়ম হলো মাসিক বন্ধ হওয়ার পর পবিত্রতা অর্জন করার জন্য গোসল করা ফরজ। যত তারাতারি সম্ভব ফরজ গোসল করতে হবে।

রোজা অবস্থায় ফরজ গোসলের নিয়ম


রোজা রেখে মহিলা বা পুরুষের স্বপ্নদোষ হয়ে থাকে। তবে এই কারনে রোজা ভঙ্গ করার কোনো প্রয়োজন নেই, ফরজ গোসল করে নিলেই হয়ে যাই।

রোজায় ফরজ গোসলের নিয়ম


ফরজ গোসলের ইসলামে একটি বিধান রয়েছে, তাই রোজায় ফরজ গোসল এবং সাধারণ ফরজ গোসলের নিয়ম একই। ফরজ গোসলের নিয়ম উপরে দেওয়া আছে।

শেষ কথা


আল্লাহ তা'আলা পবিত্র থাকা ব্যাক্তিকে পছন্দ করে এবং ভালোবাসে। তাই আমরা সকল সময় পবিত্র থাকবো। পবিত্রতা হলো ইমানের অঙ্গ। আমাদের উপর গোসল ফরজ হয়ে গেলে, আমরা যত তারাতারি সম্ভব আল্লাহ তা'আলার নৈকট্য ও ভালোবাসা অর্জন করার জন্য ফরজ গোসল করে নিবো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url