যাকাত কি? কাকে বলে? হিসাব, ক্যালকুলেটর, নিয়ম, ফজিলত সহ বিস্তারিত

যাকাত ক্যালকুলেটর

যাকাত শব্দের অর্থ কি আপনারা জানেন কি? যাকাত শব্দের অর্থ হলো বৃদ্ধি, উন্নতি ইত্যাদি।

যাকাত কোন ভাষার শব্দ আপনি জানেন কি? যাকাত আরবি ভাষার শব্দ।

যাকাত কি আপনি জানেন? যাকাত হলো ইসলামের ৫ টি স্তম্ভের মধ্যে একটি। ইসলামের বিধান হলো আপনার সম্পদের একটি ছোট্ট ভাগ গরিবের, তাই যাকাতের মাধ্যমে গরিবের সম্পদ আপনাকে ফিরিয়ে দিতে হবে।

যাকাত কাকে বলে আপনি জানেন কি? গরিবদের মাধে আপনার সম্পদের একটি ছোট্ট তাদের অংশ ফিরিয়ে দেওয়াকে যাকাত বলে।

যাকাত কত প্রকার ও কি কি আপনি জানেন? যাকাত হলো ৪ প্রকার। নিম্নে ৪ প্রকার যাকাত কি কি তা দেওয়া হলো-

১. সোনা বা রুপার যাকাত - আপনার যদি নির্দিষ্ট নিসাব পরিমাণে সোনা বা রুপার থাকে তাহলে আপনাকে সোনা বা রুপার যাকাত দিতে হবে।

২. সম্পদের যাকাত - আপনার যদি নির্দিষ্ট নিসাব পরিমাণে সম্পদ থাকে তাহলে আপনাকে সম্পদের যাকাত দিতে হবে।

৩. গবাদি পশুর যাকাত - আপনার যদি নির্দিষ্ট নিসাব পরিমাণে গবাদি পশু থাকে তাহলে আপনাকে গবাদি পশুর যাকাত দিতে হবে।

৪. রোজার যাকাত - এই রোজার যাকাতকে যাকাতুল ফিতর বলা হয়।

যাকাতের খাত সম্পর্কে আপনার পর্যাপ্ত ধারণা থাকা প্রয়োজন। যাকাতের খাত প্রধাণত ৩ টি। যাকাত প্রদানের খাত ৩ টি সম্পর্কে এই আর্টিকেলে আপনি বিস্তারিত জানতে পারবেন। কোন কোন সম্পদের উপর যাকাত ফরজ তা নিম্নে দেওয়া হলো-

  • সোনা বা রুপা
  • সম্পদ
  • গবাদি পশু

যাকাত কখন দিতে হয় আপনি জানেন কি? আপনার কাছে যদি সাত তোলা বা তার বেশী সোনা, সাড়ে বায়ান্ন তোলা বা তার বেশী রুপা, ছাগল বা ভেড়া ৪০টা বা তার বেশি, গরু, মহিষ ৩০টা বা তার বেশি, অথবা ৭.৫ ভরি স্বর্ণ কিংবা ৫২.৫ ভরি রূপা অথবা সমপরিমাণ অর্থ এক বছর যাবত গচ্ছিত থাকলে তার বাজার মূল্য অনুযায়ী মোট অর্থের শতকরা ২.৫% যাকাত দেওয়ার বিধান রয়েছে।

যাকাত কাদের উপর ফরজ আপনি জানেন কি? যাদের কাছে ১ বছর যাবত ৭.৫ ভরি স্বর্ণ কিংবা ৫২.৫ ভরি রূপা বা এর যে কোনো একটির পরিমাণ অর্থ থাকে, যাকাত তাদের উপর ফরজ।

যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি আপনি জানেন? যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত সাধার্ণত ৯ টি। নিম্নে এই শর্ত গুলো দেওয়া হলো-

১. নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকা।
২. মুসলমান হতে হবে।
৩. বালেগ হতে হবে।
৪. জ্ঞান বিবেক থাকতে হবে।
৫. দাস-দাসী না হওয়া।
৬. পূর্ণ মালিক হওয়া।
৭. নেসাব পরিমাণ মাল নিত্য প্রয়োজনীয় সম্পদের অতিরিক্ত থাকা।
৮. নেসাব পরিমাণ মাল এক বছর থাকা।
৯. মাল বর্ধনশীল হওয়া।

বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয় আপনি জানেন কি? বর্তমানে ৭.৫ ভরি স্বর্ণ এর দাম পরিমাণ টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয়।

যাকাত কখন ফরজ হয়?

স্বাধীন জ্ঞান সম্পন্ন, প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিম ব্যক্তি যখন নিসাব পরিমাণ মস্পদের পূর্ণ মালিক হল এবং তার উপর এক বছর অতিক্রান্ত হয় তখন ঐ ব্যক্তির সম্পদের উপর যাকাত ফরজ হয়।

একটি অপ্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম কিশরের নিকট অনেক টাকা আছে তার উপর যাকাত ফরজ কি না?

যাকাত ফরয হওয়ার জন্য সুস্থ মস্তিস্ক সম্পন্ন ও প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া জরুরী। তাই অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানের মালের উপর যাকাত ফরয নয়।

যাকাতের নিসাব কত টাকা?

কোন প্রাপ্ত বয়স্ক সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন নর-নারীর কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ঋণ মুক্ত সাড়ে ৫২ তোলা রুপা বা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা তার সমমূল্যের ব্যবসায়ী সম্পদ বা টাকা পয়সা থাকবে সে নেসাব পরিমান মালের মালিক হিসেবে গণ্য হবে।

সম্পদের কি পরিমাণ অংশ যাকাত হিসেবে দিতে হয়?

সম্পদের ৪০ ভাগের একভাগ যাকাত হিসেবে দিতে হবে। অর্থাৎ- শতকরা ২.৫০ টাকা যাকাত দিতে হবে।

প্রয়োজনতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়ার সাথে সাথেই যাকাত দিতে হবে?

না নেসাবের মালিক হওয়ার সাথে সাথেই যাকাত দিতে হবে না। বরং ঐ নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকের কাছে থাকাবস্থায় এক বৎসর অতিক্রম হলে যাকাত আদায় করা জরুরী হবে।

যাকাতের হিসাব

এখন আমরা যাকাতের হিসাব কিভাবে করতে হয়, সেই ব্যপারে বিস্তারিত জানবো-

স্বর্ণের যাকাতের হিসাব

স্বর্ণের বা রুপার যাকাতের বিস্তারিত হিসাব নিম্নে দেওয়া হলো-

কি পরিমাণ স্বর্ণ থাকলে যাকাত ফরয হয়?

যদি কারো নিকট শুধু সোনা থাকে (রুপা, টাকা-পয়সা, ব্যবসায়িক পণ্য কোন কিছুই না থাকে) তাহলে সাড়ে সাত তোলা বা তার বেশী সোনা থাকলে বৎসরান্তে তার উপর যাকাত ফরয হয়।

কি পরিমাণ রুপা থাকলে যাকাত ফরয হয়?

যদি কারো নিকট শুধু রুপা থাকে (সোনা, টাকা-পয়সা, ব্যবসায়িক পণ্য কোন কিছুই না থাকে) তাহলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা বা তার বেশী রুপা থাকলে বৎসরান্তে তার উপর যাকাত ফরয হয়।

যদি কিছু স্বর্ণ বা কিছু রুপা সাথে টাকা পয়সা থাকে তাহলে তার হুকুম কী?

যদি কারো নিকট কিছু সোনা থাকে এবং তার সাথে কিছু রুপা বা কিছু টাকা-পয়সা বা কিছু ব্যবসায়িক পণ্য থাকে তাহলে এ ক্ষেত্রে সোনার সাড়ে সাত তোলা বা রুপার সাড়ে বায়ান্ন তোলা দেখা হবে না বরং সোনা, রুপা এবং টাকা-পয়সা ও ব্যবসায়িক পণ্য যা কিছু আছে সবটা মিলে যদি সাড়ে সাত তোলা সোনা বা সাড়ে বায়ান্না তোলা রুপার যে কোন একটার মূলের সমপরিামণ হয়ে যায়, তাহলে (বৎসরান্তে) তার উপর যাকাত ফরয হবে।

স্বর্ণ-রুপা যদি অলংকার বানিয়ে ব্যবহার করে তাহলেও কি তাতে যাকাত দিতে হবে?

স্বর্ণ-রুপা নিজের মালিকানায় থাকলেই তার যাকাত দিতে হবে। চাই তা অলংকার হিসেবে ব্যবহার হোক বা না হোক।

স্বর্ণ-রুপার অলংকারের ক্ষেত্রে বিক্রয়ের এক মূল্য আর নগদের এক মূল্য হয়ে থাকে? এতে কোন মূল্য হিসেবে যাকাত দিবে?

প্রত্যেক বস্তুর বর্তমান মূল্য হিসেবে যাকাত আদায় করতে হবে। তাই স্বর্ণ-রুপার অলংকারের বর্তমান মূল্য হিসেবে যাকাত আদায় করতে হবে।

সম্পদের যাকাতের হিসাব

সম্পদের যাকাতের বিস্তারিত হিসাব নিম্নে দেওয়া হলো-

ব্যবসার উপকরণের উপর যাকাত আসে কি না?

ব্যবসার উপকরণের উপর যাকাত আসে না। যেমন- মিল কারখানা, দোকান, উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, মেশিন, ভাড়ায় খাটানো হয় এমন বাড়ি-গাড়ি, রিকশা, সি,এন,জি, বাস, ট্রাক, লঞ্চ ইত্যাাদির উপর যাকত আসে না।

ব্যবসায়ী উপকরণের থেকে উৎপাদিত পণ্য ও টাকার উপর যাকাত আসবে কি না?

হ্যাঁ, ব্যবসা দ্বারা উৎপাদিত পণ্য ও উপার্জিত টাকা নেসাব পরিমাণ হলে তার উপর যাকাত ফরজ হবে।

সিকিউরিটি মানি হিসেবে যে টাকা দোকান ও বাড়ির মালিক গ্রহণ করে থাকে তার দিতে হবে কি না?

সিকিউরিটি মানি হিসেবে যে টাকা দোকান ও বাড়ীর মালিক গ্রহণ করে থাকে যদি চুক্তি অনুযায়ী প্রতিমাসে তা ভাড়া বাবদ কর্তন করা হয় তাহলে মালিকদেরকে ঐ টাকার যাকাত দিতে হবে। আর যদি তা ফেরতযোগ্য হয় অর্থাৎ- দোকান বা বাড়ি ছেড়ে দিলে তা ফেরৎ দেয়া হয় ও মলিকগণ ঐ টাকা খরচ না করে আমানত হিসেবে রাখেন তাহলে ভাড়াটিয়াকে ঐ টাকার যাকাত দিতে হবে।

দোকান শুরু করার সময় প্রায় এক লক্ষ টাকার মাল ছিল কিন্তু বছরের শেষে আরো যুক্ত হয়ে প্রায় পৌনে দুই লক্ষ টাকা হল কিন্তু অতিরিক্ত টাকার উপর বছর অতিক্রম হয়নি তাহলে এখন বছর শেষে কত টাকার যাকাত দিতে হবে?

অর্থ সম্পদের প্রত্যেকাঁ অংশের উপর পূর্ণ এশবছর অতিবাহিত হওয়া শর্ত নয়। কাজেই কারো কাছে যদি বছরের শুরুতে ১,০০০০০/- (এক লক্ষ) টাকা থাকে আর তা বাড়তে বাড়তে বছরের শেষে দুই লক্ষ টাকা হয়ে যায় তাহলে বছরের শেষে দুই লক্ষ টাকার যাকাত দিতে হবে।

বিক্রিত পন্যের বকেয়া টাকা হস্তগত হওয়ার আগে যাকাত দিতে হবে কি না?

বিক্রিত পণ্যের বকেয়া টাকা হস্তগত হওয়ার পূর্বে যাকাত আদায় করতে হবে না। আর বকেয়া টাকা হস্তগত হওয়ার পর পেছনের বছরগুলোর যাকাতও একত্রে আদায় করতে হবে। আর যদি বকেয়া টাকা বা ঋণ ফেরৎ পাওয়ার আশা না থাকে তাহলে যাাকাত দিতে হবে না। তবে পেলে বিগত সকল বছরের যাকাত দিতে হবে।

জমির উপর যাকাত দিতে হবে কি?

জমির উপর যাকাত দিতে হবে না। তবে ঐ জমি থেকে যে কোনো মাধ্যমে আপনি যে অর্থ আয় করবেন, সেই অর্থের যাকাত দিতে হবে।

যাকাত হিসাব করার নিয়ম আপনি জানেন কি? আপনার সকল সম্পদের মোট অঙ্ক থেকে আপনার ঋণের অঙ্ক বিয়োগ করতে হবে। এবার এই অঙ্কের টাকার ২.৫% বের করতে হবে। এই ২.৫% টাকা আপনাকে যাকাত দিতে হবে।

যাকাত ক্যালকুলেটর

যাকাতের হিসাব ক্যালকুলেটর কিভাবে করবেন নিম্নে ব্যাখ্যা করা হলে-

অনেক ইসলামিক চিন্তাবিদগণ রূপাকে আদর্শ মান (নিসাব) হিসেবে ধরে যাকাত গণনার পরামর্শ দেন যাতে অধিক পরিমাণে গরিব লোক উপকৃত হতে পারে।

বিঃদ্রঃ স্বর্ণ অথবা রূপা যার মূল্য নূন্যতম হবে তাকে ধরে যাকাত হিসাব করতে হবে।

এখন আপনার সম্পদের একটি লিস্ট তৈরি করতে হবে, যেমন -

  • স্বর্ণ / স্বর্ণের জুয়েলারি কত টাকা?
  • রূপা / রূপার জুয়েলারি কত টাকা?
  • মূল্যবান পাথর কত টাকা?
  • নগদ টাকা কত টাকা?
  • ঋণ দিয়েছেন / বিনিয়োগ / তহবিল / শেয়ার কত টাকা?
  • জমিদারী সম্পদ কত টাকা?
  • ব্যবসায় জমাকৃত টাকা কত টাকা?
  • প্রাণী /মাছ চাষ /পোল্ট্রি কত টাকা?

এবার এর মধ্যে আপনার যে গুলো আছে সেই গুলোর মোট টাকা হিসেব করতে হবে। এরপর ঋণ করেছেন কিন্তু এ বছর পরিশোধ হয় নি সেই সম্পদের পরিমাণ (যদি থাকে) বাদ দিতে হবে। এবার আপনার যদি ৫২.৫ ভরি রূপা এর দাম পরিমান বা তার বেশি অর্থ থাকে, তাহলে আপনাকে এর ২.৫% যাকাত দিতে হবে।

শতকরা কত টাকা যাকাত দিতে হয় জানলেন কি? শতকরা ২.৫ টাকা যাকাত দিতে হয়।

নগদ টাকার যাকাত হিসাব করার নিয়ম জানেন কি? নগদ টাকার যাকাত হিসাব করার নিয়ম হলো ৫২.৫ ভরি রূপা এর দাম পরিমান হলে, এই টাকার ২.৫% যাকাত দিতে হবে।

যাকাত কাদের দেয়া যাবে আপনি জানেন কি? যাকাতের টাকা কাদের দেওয়া যাবে, তাদের সম্পর্কে নিম্নে দেওয়া হলো-

ফকীর ও মিসকিন কাকে বলে? তাদেরকে যাকাত দেয়া যাবে কি না?

ফকীর ও মিসকিনদেরকে যাকাত দেয়া যাবে। আর ফকীর বলে, যাদের নিকট সন্তান-সন্ততির প্রয়োজন সমাধা করার মত সম্বল নেই বা যাদের নিকট যাকাত ফেৎরা ওয়াজিব হওয়ার পরিমাণ অর্থ সম্পদ নেই।
মিসকীন বলে যারা সম্পূর্ণ রিক্ত হস্ত অথবা যাদের জীবিকা অর্জনের ক্ষমতা নেই।

শুনেছি যাকাত উসুলকারীকে যাকাত দেয়া যায়, যানতে চাই এর অর্থ কি?

ইসলামী রাষ্ট্র হলে তার যাকাত তহবিলের দ্বায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিগণকে যাকাত দেয়া যায়। আর বর্তমানে আমাদের দেশ ইসলামী দেশ না হওয়ার এ কাজে নিযুক্ত কাউকে যাকাত দেয়া যাবে না।

আপন বোন বা আপন ভাইকে যাকাতের টাকা দেয়া যাবে কি না?

হ্যাঁ, আপন ভাই, বোনকে যাকাতের টাকা দেয়া যাবে।

মুসাফির ব্যক্তি কে যাকাতের টাকা দেয়া যাবে কি না?

মুসাফির ব্যক্তি সে বাড়িতে সম্পদশালী হলেও সফরে রিক্ত হস্ত হয়ে পড়লে তাকে যাকাতের টাকা দেয়া যাবে।

নিজের গরীব চাকর-নওকর বা কর্মচারীকে যাকাতের টাকা দেয়া যাবে কি না?

নিজের গরীব চাকর-নওকর বা কর্মচারীকে যাকাতের টাকা দেয়া যাবে। তবে এটা বেতন বাবদ কর্তন করা যাবে না।

যাকাত কাকে দেওয়া যাবে না আপনি জানেন কি? যে সকল ব্যক্তিকে যাকাত দেয়া যাবে না, তাদের সম্পর্কে নিম্নে দেওয়া হলো-

যাকাতের নেসাব পরিমাণ মালের মালিক ব্যক্তিকে যাকাত দেয়া যাবে কি না?

যার নিকট নেছাব পরিমাণ অর্থ/সম্পদ আছে তাকে যাকাত দেয়া যাবে না।

নিজের উর্ধতন পুরুষদের কাকে কাকে যাকাত দেয়া যাবে না?

যাকাত দাতার মা, বাবা, দাদা, দাদী, পরদাদা, পরদাদী, পরনানা, পরনানী ইত্যাদি উপরের সিঁড়ির পুরুষদেরকে যাকাত দেয়া যাবে না।

নিম্ন স্তরের কোন নিকটাত্মীয়কে যাকাত দেয়া যাবে কি না?

যাকাত দাতার ছেলে, মেয়ে, নাতি, নাতনি, পোতা, পৌত্রী, ইত্যাদি নীচের সিঁড়িকে যাকাতের টাকা দেয়া যাবে না।

স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে যাকাতের টাকা দিতে পারবে কি না?

যাকাত দাতার স্বামী বা স্ত্রী একে অপরকে যাকাতের টাকা দিত পারবে না।

নেসাব পরিমাণ মালের মালিকের নাবালেগ বা বালিগ সন্তানকে যাকাত দেয়া যাবে কি না?

নেসাব পরিমাণ মালের মালিকের নাবালিগ সন্তানকে যাকাতের টাকা দেয়া যাবে না। তবে এমন ব্যক্তির বালিগ ছেলে যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত হলে তাকে যাকাত দেয়া যাবে।

যাকাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে আপনি জানেন কি? যাকাত আপনার সম্পদকে শুদ্ধ করবপ, যাকাত আপনার সম্পদকে জীবনে আশীর্বাদ বাড়িয়ে দিবে এবং যাকাত আপনার সম্পদকে অনেক পুরস্কার লাভ করিয়ে দিবে।

যাকাতের অর্থনৈতিক গুরুত্ব সম্পর্কে আপনি জানেন কি? যাকাত গরিবের জন্য এবং পিছিয়ে পড়া মানুষের অর্থনৈতিক গুরুত্ব রাখে। যাকাত অর্থ সরবরাহ বৃদ্ধি করে।

যাকাতের সামাজিক গুরুত্ব সম্পর্কে আপনি জানেন কি? যাকাতের মাধ্যমে সামাজিক অনেক গুরুত্ব রয়েছে। সমাজে অভাবী এবং দরিদ্র মানুষ গুলোর জন্য যাকাত একটি নিয়ামত।

যাকাত সম্পর্কে কোরআনের আয়াত গুলো আপনি শুনেছেন কি? যাকাত সম্পর্কে অনেক গুলো কোরআনের আয়াত এসেছে। নিম্নে কয়েকটি আয়াত দেওয়া হলো-

১. সূরাহ হাজ্জ ২২: ৪১ - আমি যদি তাদেরকে পৃথিবীতে রাজত্ব দান করি, তাহলে তারা সালাত কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে, সৎকাজের আদেশ দিবে এবং অসৎ কাজ হতে বিরত রাখবে, আর সব কাজের চূড়ান্ত পরিণতি একান্তই আল্লাহর ইচ্ছাধীন।

২. সূরাহ নূর ২৪:৩৭ - সে সব লোক, যাদেরকে ব্যবসায়-বাণিজ্য এবং ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ, সলাত কায়িম এবং যাকাত প্রদান হতে বিরত রাখে না। তারা ভয় করে সেই দিনকে যেদিন অনেক অন্তর ও দৃষ্টি বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।

৩. সূরা তাওবাহ্ ৯:৬০ - নিশ্চয়ই সদকাহ্ (যাকাত) হলো- ফকীর, মিসকীন, তৎসংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের জন্যে, যাদের চিত্তাকর্ষণ করা হয় তাদের জন্যে, আল্লাহর পথে এবং মুসাফিরদের জন্যে-এটা আল্লাহর বিধান। আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।

যাকাত সম্পর্কে হাদিস

যাকাত সম্পর্কে অনেক গুলো হাদিস এসেছে, এর মধ্যে কয়েকটি হাদিস নিম্নে দেওয়া হলো-

১. সহীহ্ বুখারী: ১৪১১ - হযরত হারিসাহ ইবনি ওয়াহব (রা:) বলেন, আমি নবী কারীম (সা:) কে বলতে শুনেছি, তোমরা সদাকাহ বা যাকাত প্রদান কর, কেননা তোমাদের ওপর এমন যুগ আসবে যখন মানুষ আপন সদাকাহ নিয়ে ঘুরে বেড়াবে কিন্তু তা গ্রহণ করার মতো কাউকে পাবে না।

২. সহীহ্ মুসলিম: ৯৮৯ - হযরত জারীর ইবনি আবদুল্লাহ্ (রা:) বলেন, নবী কারীম (সা:) ইরশাদ করেন, যখন তোমাদের নিকট যাকাত আদায়কারী আসবে, তখন সে যেন তোমাদের নিকট থেকে তোমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যায়।

যাকাতের ফজিলত

যাকাতের ফজিলত সম্পর্কে ইসলামে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যাকাত ইসলামের ৫ টি স্তম্ভের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি। ঈমানের পর যাকাত ও ইবাদত এর গুরুত্ব অনেক বেশি।

কুরআনে যাকাত শব্দটি কতবার এসেছে আপনি জানেন কি? কুরআনে যাকাত শব্দটি ৩২ বার এসেছে। আল কোরআনে ১৯ টি সূরায় যাকাত সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

যাকাত কত হিজরীতে ফরজ হয় আপনি জানেন কি? যাকাত ২য় হিজরীতে ফরজ হয়। মৌলিকভাবে যাকাত হিজরতের পূর্বে মক্কাতেই ফরজ হয়েছিলো। তবে যাকাত মদীনায় হিজরী দ্বিতীয় সনে জাকাতের বিস্তারিত বিধানাবলী প্রচলিত হয়।

যাকাত না দেওয়ার শাস্তি সম্পর্কে আপনার জানা আছে কি? যাকাত না দেওয়ার শাস্তি সম্পর্কে আল-কোরআন ও হাদিসে কঠিন শাস্তি কথা বলা হয়েছে। একটি আয়াতে এসেছে, যাকাত না দেওয়া ব্যক্তির জমা করা সোনা এবং রুপা আগুনে উত্তপ্ত করে সেই ব্যক্তির শরীরে স্পর্শ করা হবে।

যাকাতের টাকা মাদ্রাসায় দেয়া যাবে কি আপনি জানেন কি? মাদ্রাসায় যদি গরীবদের জন্য ফান্ড খোলা থাকে, তাহলে সেই মাদ্রাসায় যাকাতের টাকা দেওয়া যাবে। তবে যাকাতের টাকা মাদ্রাসায় অন্য কোনো কাজে লাগানো যাবে না।

যাকাতের পরিমাণ সম্পদের কত শতাংশ আপনি জানেন কি? যাকাতের পরিমাণ সম্পদের ২.৫ শতাংশ।

যাকাতের বিবিধ মাসায়িল

মসজিদ মাদ্রাসা ইত্যাদি নির্মাণ কাজের জন্য যাকাতের টাকা দেয়া যাবে কি না?

মসজিদ, মাদরাসা বা স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল প্রভৃতি নির্মাণ কাজের জন্য যাকাতের টাকা দেয়া যাবে না।

মৃত ব্যক্তির দাফন-কাফনের জন্য বা মৃত ব্যক্তির ঋণ ইত্যাদি আদায়ের জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যায় কি না?

মৃত ব্যক্তির দাফন-কাফনের জন্য বা মৃত ব্যক্তির ঋণ ইত্যাদি আদায়ের জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যায় না।

কোম্পানীর শেয়ারের যাকাতের হুকুম কি?

বিভিন্ন কোম্পানীর শেয়ারের যাকাতের হুকুম হল, যদি শেয়ারগুলা দাম বাড়লে বিক্রয় করে দিবে এ উদ্দেশ্যে ক্রয় করা হয় তাহলে তার পূর্ণ বাজার দরের উপর যাকাত ওয়াজিব হবে। আর যদি কোম্পানী হতে বাৎসরিক লাভ কামানোর উদ্দেশ্যে ক্রয় করা হয়, তাহলে কোম্পানীর যে পরিমাণ সম্পদ যাকাতযোগ্য (যা ব্যালেন্স শীটের সাহায্যে বের করা যাবে) শেয়ার প্রতি তা আনুপাতিক হার যা হয় শুধুমাত্র সে পরিমাণের যাকাত দিতে হবে।

প্রফিডেন্ড ফান্ডের টাকার উপর যাকাত ওয়জিব হবে কি না?

প্রফিডেন্ড ফান্ডের টাকা হাতে আসার পর বছর অতিবাহিত হলে যাকাত ওয়াজিব হবে। কিন্তু যে টাকাটা কতৃপক্ষ বাধ্যতামূলক নয়; বরং চাকুরিজীবী স্বেচ্ছায় কর্তন করায় তার যাকাত প্রতি বছর আদায করতে হবে।

যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে চাঁদের মাসের হিসাব করবে? না ইংরেজী মাসের?

যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে চাঁদের মাস হিসেবে বছর পূর্ণ হওয়ার হিসেব করবে। এক্ষেত্রে ইংরেজী বৎসরের হিসাব ধর্তব্য নয়।

যাকাতের ঋণীর মাসায়িল

কেউ যদি জমিতে প্রোথিত কোন সম্পদ লাভ করে তবে তাতে কি ওয়াজিব হবে?

যদি জমিতে অবস্থিত অর্থাৎ প্রোথিত কোন সম্পদ লাভ করে তবে তাতে খুমুস তথা এক পঞ্চমাংশ ওযাজিব হবে।

পাহাড়, পর্বতে যদি কেউ কোন পাথরের খনি পায় তাহলে সে তা থেকে কিছু দিতে হবে কি না?

না, পাহাড়ে প্রাপ্ত কোন কিছুর উপর খুমুস এক পঞ্চমাংশ ওয়াজিব নয়। কেননা রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেনঃ পাথরের উপর খুমুস নাই।

কেউ অমুসলিম রাষ্ট্রে নিরাপত্তা নিয়ে গেল ও সেখানে কোন ভূ-গর্ভস্থ সম্পদ পেল তাহলে কি করবে?

যদি অমুসলিম রাষ্ট্রে নিরাপত্তা নিয়ে প্রবেশের পর তাদের বাড়ীতে কিছু পায় তাহলে তা ঐ বাড়ীওয়ালাকে ফিরিয়ে দিবে। আর যদি তাদের পতিত ভূমিতে কিছু পায় তাহলে তা উদ্ধারকারী নিজেও নিতে পারবে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url