এতিমদের নিয়ে হাদিস - এতিম পালনের ফজিলত, এতিম কাকে বলে কত প্রকার

এতিমদের নিয়ে হাদিস

এতিমদের নিয়ে অনেক গুলো হাদিস রয়েছে। এতিমদের নিয়ে হাদিস সম্পর্কে রসুলুল্লাহ (সা:) বুখারি শরীফের হাদিস নং ৫৩০৪ তে বলেছেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তর্জনী ও মধ্য আঙুলি তুলে ধরেন এবং এ দুটি আঙুলের মধ্যে তিনি সামান্য ফাঁক করে বলেন, আমি ও এতিম প্রতিপালনকারী জান্নাতে এভাবে থাকব।


এই আর্টিকেলে আমরা এতিমদের নিয়ে হাদিস ও আয়াত, এতিম এর হক, কাকে বলে ও কত প্রকার, অধিকার, ফজিলত ইত্যাদি সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।

এতিমদের নিয়ে হাদিস


এতিমদের সম্পর্কে অনেক গুলো হাদিস এর মধ্যে নিম্নে কয়েকটি হাদিস আলোচনা করা হলো-

১. এতিমদের নিয়ে হাদিস - মুসলিম, হাদিস নং ৫২৯৫


যারা এতিম দের সাহায্য করে, তাদের মর্যাদা সম্পর্কে প্রিয় নবি (সা:) বলেন, "বিধবা, এতিম ও গরিবের সাহায্যকারী ব্যক্তি আল্লাহর পথে মুজাহিদ এর সমান। তাদের মর্যাদা রাত জাগরণকারীর নামাজিদের মতো, যে কখনো ক্লান্ত হয় না। আরো বলেছেন তাদের মর্যাদা সেই রোজাদারের মতো, যে কখনো রোজা ভঙ্গ করে না।"

২. এতিমদের নিয়ে হাদিস - মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং ১৮২৫২


মুসনাদে আহমাদ হাদিস শরিফে এসেছে, "যে ব্যক্তি কোনো এতিমকে আপন মাতা-পিতার সঙ্গে নিজেদের পারিবারিক খাবারের আয়োজনে করে এবং সেই এতিম কে এই পরিমাণ আহার্য দান করে যে, সেই এতিম পরিতৃপ্ত হয়ে আহার করে, তাহলে সেই ব্যাক্তির জন্য জান্নাত ওয়াজিব।"

৩. এতিমদের নিয়ে হাদিস - ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৬৭৯


ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৬৭৯, নবি কারিম (সা:) ইরশাদ করেছেন, "ঐ মুসলিব বাড়িই সর্বোত্তম, যে মুসলিমের বাড়িতে এতিম আছে এবং সেই এতিমের সাথে ভালো ব্যবহার করে। তিনি আরো বলেন যে, ঐ মুসলিম বাড়ি সবচেয়ে নিকৃষ্ট, যে মুসলিমের বাড়িতে এতিম আছে কিন্তু সেই এতিমের সাথে খারাপ ব্যবহার করে।"

এতিম সম্পর্কে আয়াত


এতিম সম্পর্কে আল-কোরআানে অনেক গুলো আয়াত রয়েছে। এতিম সম্পর্কে আয়াত গুলোর মধ্যে নিম্নে কয়েকটি দেওয়া হলো-

১. এতিম সম্পর্কে আয়াত - সুরা দুহা, আয়াত নং ৮


আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, "হে নবি, আপনি এতিমের প্রতি কঠোর হবেন না।"

২. এতিম সম্পর্কে আয়াত - সুরা দাহর, আয়াত নং ৮ ও ৯


ইরশাদ হয়েছে, "তারা আহারের প্রতি আসক্তি সত্ত্বেও আল্লাহর ভালোবাসায় অভাবী, এতিম ও বন্দিকে আহার্য দান করে। তারা বলে শুধু আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই তোমাদের আহার্য দান করি। বিনিময়ে তোমাদের থেকে কোনো প্রতিদান চাই না।"

৩. এতিম সম্পর্কে আয়াত - সুরা বাকারা, আয়াত নং ২২০


আমাদের প্রিয় নবি হজরত মোহাম্মদ (স:) শিশুকালে এতিম ছিলেন। জন্মের পূর্বেই পিতাকে হারান। তিনি সারাটি জীবন সমাজের এতিম অসহায়দের জন্য কাজ করেছেন। আল্লাহ বলেন, "তারা তোমাকে এতিম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দাও, তাদের ইসলাহ তথা সুব্যবস্থা (পুনর্বাসন) করা উত্তম।"

এতিম কাকে বলে


ইসলামিক পরিভাষায় যে শিশুর মাতা আছে কিন্তু পিতা মারা গেছে তাদেরকে এতিম বলা হয়। অর্থাৎ যে শিশুর মাতা আছে পিতা নেই তাদের কে এতিম বলা যাবে, এবং যে শিশুর মাতা-পিতা উভয় নেই তাদের কে এতিম বলা যাবে। তবে পিতা আছে মাতা নেই তাদেরকে এতিম বলা যাবে না।

একটি শিশুর দেখা-সোনা, লালন-পালন সবই পিতার দায়িত্ব। তাই পিতা জিবিত থাকতে একটি শিশু এতিম হয় না। কিন্তু পিতা না থাকলে সেই শিশুর সম্পর্ণ দায়িত্ব মাতার উপর আসে, সাধারণত মাতা একটি পরিবারে ইনকাম করে না, তাই মাতা কিভাবে সেই শিশু লালন-পালন করবে। এই জন্য মাতা থাকলে ও পিতা না থাকলে সেই শিশুটিকে এতিম বলা হয়। তবে শিশু যদি বালেগ বা স্বনির্ভর হয়ে যায় এবং তখন তার পিতা মারা যায়, তাহলে তাকে এতিম বলা যাবে না। কারণ সে এখন স্বনির্ভর।

এতিম শব্দের অর্থ হলো নিঃস্ব বা নিঃসঙ্গ। বাংলা পরিভাষায় যে শিশুর মাতা-পিতা নেই তাদেরকে এতিম বলা হয়।

এতিম কত প্রকার ও কি কি?


ইসলামিক পরিভাষায় এতিম ২ প্রকার। যেমন - ১. পিতা বিহীন এতিম; ২. পিতা-মাতা বিহীন এতিম।

১. পিতা বিহীন এতিম : যে শিশুর মাতা জিবিত আছে কিন্তু পিতা জিবিত নেই, সেই শিশুকে পিতা বিহীন এতিম বলা হয়।

২. পিতা-মাতা বিহীন এতিম : যে শিশুর মাতা-পিতা উভয় জিবিত নেই, সেই শিশুকে পিতা-মাতা বিহীন এতিম বলা হয়।

এতিম পালনের ফজিলত


এতিম পালনের অনেক গুলো ফজিলত আল-কোরআনে ও হাদিস শরীফে দেওয়া হয়েছে। এই আর্টিকেলে এতিম পালনের সর্বউত্তম ৪ টি ফজিলত নিম্নে দেওয়া হলো-

১. মুসলিমদের বাড়ির মধ্যে ঐ বাড়ি উত্তম, যে বাড়িতে এতিম রয়েছে এবং তার সাথে ভালো ব্যবহার করা হয়। (ইবনে মাজাহ)
২. যে ব্যাক্তি এতিমকে নিজের পরিবারের সাথে খাবারের আয়োজন করে এবং তাকে তৃপ্তি সহকারে খাবার দেয়, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব। (মুসনাদে আহমাদ)
৩. যারা এতিমদের সাহায্য করে তারা মুজাহিদের সমান। (মুসলিম)
৪. এতিম প্রতিপালক ও রাসুল (সা:) জান্নাতে দুইটি আঙুলের মতো পাশাপাশি থাকবে। (বুখারি)

এতিমদের খাওয়ানো


এতিমদের খাওয়ানো সম্পর্কে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৬৭৯ এবং মুসলিম, হাদিস নং ২৬৩০ তে ২ টি হাদিস রয়েছে। এতিমদের খাওয়ানো হাদিস ২ টি নিম্নে দেওয়া হলো-

এতিমদের খাওয়ানো - মাজাহ, হাদিস নং ৩৬৭৯

এতিমদের খাওয়ানো এক নারীকে রাসুল (সা:) বলেন, "নিশ্চয়ই আল্লাহ এতিমদের খাওয়ানোর কারণে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব করে দিয়েছেন এবং এ কারণেই জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়েছেন।"

এতিমদের খাওয়ানো - মুসলিম, হাদিস নং ২৬৩০

মুসলিম শরীফের হাদিস নং ২৬৩০ তে রাসুল (সা:) বলেন, যে ব্যাক্তি তার পরিবারের সাথে এতিমকে পর্যাপ্ত পরিমানে খাওয়াবে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব।

এতিমের মাথায় হাত বুলানো


এতিমের মাথায় হাত বুলানো সম্পর্কে মুসনাদে আহমদ হাদিস নং ৪৫/২৪৮ নম্বরে মহানবী (স.) বলেন, "যে ব্যক্তি কোনো ছেলে অথবা মেয়ে এতিমের মাথায় একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে হাত বুলিয়ে দেয়, তাহলে সেই এতিমের মাথার যত গুলো চুল দিয়ে তার হাতটি অতিক্রম করবে, তার তত সওয়াব অর্জিত হবে।"

এতিমকে সান্ত্বনা দিলেও অসংখ্য সওয়াব লাভ হয়। তাই এতিমকে আমরা যত টুকু সম্ভব আদর করবো এবং সাহায্য করার চেষ্টা করবো।

সূরা নিসার আলোকে এতিমের অধিকার


সূরা নিসার আলোকে এতিমের অধিকার সম্পর্কে ২ টি আয়াত রয়েছে। সূরা নিসার ২ ও ১০ নং আয়াতে এতিমদের নিয়ে বলা হয়েছে, নিম্নে আয়াত ২ টি দেওয়া হলো-

এতিমের অধিকার - সূরা নিসার ২ নং আয়াত

وَ اٰتُوا الۡیَتٰمٰۤی اَمۡوَالَهُمۡ وَ لَا تَتَبَدَّلُوا الۡخَبِیۡثَ بِالطَّیِّبِ ۪ وَ لَا تَاۡکُلُوۡۤا اَمۡوَالَهُمۡ اِلٰۤی اَمۡوَالِکُمۡ ؕ اِنَّهٗ کَانَ حُوۡبًا کَبِیۡرًا

অর্থ : তোমরা ইয়াতীমদেরকে তাদের ধন-সম্পদ দিয়ে দাও এবং তোমরা অপবিত্র বস্ত্তকে পবিত্র বস্ত্ত দ্বারা পরিবর্তন করো না এবং তাদের ধন-সম্পদকে তোমাদের ধন-সম্পদের সাথে খেয়ো না। নিশ্চয় তা বড় পাপ।

এতিমের অধিকার - সূরা নিসার ১০ নং আয়াত

اِنَّ الَّذِیۡنَ یَاۡکُلُوۡنَ اَمۡوَالَ الۡیَتٰمٰی ظُلۡمًا اِنَّمَا یَاۡکُلُوۡنَ فِیۡ بُطُوۡنِهِمۡ نَارًا ؕ وَ سَیَصۡلَوۡنَ سَعِیۡرًا

অর্থ : নিশ্চয় যারা ইয়াতীমদের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে তারা তো তাদের পেটে আগুন খাচ্ছে; আর অচিরেই তারা প্রজ্জ্বলিত আগুনে প্রবেশ করবে।

শেষ কথা


আমাদের এই educationbangla.info ওয়েব সাইটে আরবি, বাংলা উচ্চারণ ও বাংলা অর্থ সহ সকল দোয়া, হাদিস, আমল, জিকির, তাসবিহ, নিয়ত ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আপনারা আমাদের ওয়েব সাইট ঘুরে সকল কিছু দেখতে পারেন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url